Bangla Probondho : দেহের গঠনে ও মনের বিকাশে খেলাধুলার ভূমিকা রচনা সূত্র: ভূমিকা—খেলাধুলোর বিবর্তন ও মনুষ্যত্বের জাগরণ—খেলাধুলো ও চরিত্রগঠন—খেলাধুলো ও শৃঙ্খলাবোধ— যন্ত্র নির্ভরতার যুগে শরীরচর্চার গুরুত্ব—বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধের জাগরণ—খেলাধুলো ও জাতীয় সংহতি—খেলাধুলো ও শিক্ষা-উপসংহার।
“মোদের যেমন খেলা তেমনি যে কাজ, জানিসনে কি ভাই,
তাই কাজকে কভু আমরা না ডরাই।
খেলা মোদের লড়াই করা, খেলা মোদের বাঁচা মরা, খেলা ছাড়া কিছুই কোথাও নাই।”
—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
⬗ ভূমিকা :
প্রাচীনকাল থেকেই খেলাধুলো মানুষের শারীরিক গঠন ও মানসিক বিকাশের প্রধান উৎস হিসেবে স্বীকৃত। মনের বিকাশের জন্য যেমন জ্ঞানার্জনের প্রয়োজন, তেমনি দৈহিক বিকাশ ও মানসিক সুস্থতার জন্য প্রয়োজন খেলাধুলো। বস্তুত, খেলাধুলোর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় অফুরন্ত আনন্দের উচ্ছ্বাস। মানুষের মনের স্বতঃস্ফূর্ত ব্যাপ্তি ও বিকাশে খেলাধুলো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
⬗ খেলাধুলোর বিবর্তন ও মনুষ্যত্বের জাগরণ :
খেলাধুলো মানবসমাজে আদিকাল থেকে চলে আসছে। এই খেলাধুলোর অভ্যাস ও বিবর্তনে গড়ে ওঠে দেশ বা দেশীয় মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, নিজস্ব জীবনবোধ। ক্রিকেট, হকি, লন টেনিস, টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, দাবা ইত্যাদি এক-এক দেশের নিজস্ব খেলা আজ বিশ্বের ক্রীড়াঙ্গনে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ভৌগোলিক বেড়াজাল, জাতিগত ও ধর্মগত ভিন্নতা মুছে গিয়ে মানুষ মানুষের আরও নিকটে আসার সুযোগ পেয়েছে। আন্তর্জাতিক স্তরের বিভিন্ন ক্রীড়ানুষ্ঠান দূরত্বের ব্যবধান ঘুচিয়ে মানুষকে আরও কাছে টেনে এসেছে। এর মধ্য দিয়ে এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের শুভেচ্ছা বিনিময় ঘটে। ভাবের আদানপ্রদানের মধ্য দিয়ে পারস্পরিক সম্প্রীতির সেতুবন্ধন গড়ে ওঠে।
⬗ খেলাধুলো ও চরিত্রগঠন :
খেলাধুলার মাধ্যমেই ব্যক্তির চরিত্রগঠনের কাজ শুরু হয়ে যায়। জন্মলগ্ন থেকে হাত-পা ছুড়ে খেলার মাধ্যমে নিজের মনোভাব প্রকাশের দ্বারা যে শিখন প্রক্রিয়ার সূত্রপাত ঘটে তারই প্রসার ঘটে পুতুলখেলার মাধ্যমে সম্পর্ক তৈরিতে। ফলে বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিশু যখন গৃহকোণ ত্যাগ করে ক্রীড়াঙ্গনে প্রবেশ করে তখন সে বৃহত্তর সমাজের সঙ্গে সামঞ্জস্যবিধানে সপারক হয়ে ওঠে। খেলাধুলার
প্রতি আগ্রহ শিশুকে কর্মস্পৃহ, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, আলস্যবর্জিত, নিষ্কাম মানসিকতা গড়ে তুলতে সহায়তা করে।
আরও দেখুনঃ আধুনিক জীবনে প্রযুক্তির ব্যবহারঃ বাংলা প্রবন্ধ রচনা | Bangla Probondho rachana
⬗ খেলাধুলো ও শৃঙ্খলাবোধ :
নিয়মিত খেলাধুলো ও শরীরচর্চার মধ্য দিয়ে মানুষের মনে গড়ে ওঠে এক শৃঙ্খলাবোধ। ক্রীড়াঙ্গনে নিয়মিত শৃঙ্খলাবোধের অনুশীলনে দেহ হয়ে ওঠে সুস্থ এবং মন হয়ে ওঠে সবল, সতেজ ও সুন্দর। মনে এক সমষ্টিবোধের জাগরণ ঘটে, দলগত আদর্শ ও ঐক্যবোধের উন্মেষ হয়। ব্যক্তিগত স্বার্থ মন থেকে বিলুপ্ত হয়। সেই জায়গায় সমষ্টির কল্যাণ চিন্তা বা দলগত ঐক্য মুখ্য হয়ে ওঠে যা একটি দেশ ও জাতির উন্নয়নের সোপান।
⬗ যন্ত্রনির্ভরতার যুগে শরীরচর্চার গুরুত্ব :
বর্তমানের যন্ত্রনির্ভরতার যুগে ক্ষুধামান্দ্যর মতো সাধারণ অসুখ থেকে শুরু করে ব্রেন হ্যামারেজ, হার্ট অ্যাটাক, ওবেসিটি প্রভৃতি নানা প্রকার জটিল রোগের উদ্ভাবনা মানুষকে মৃত্যুমুখী করে তুলতে পারে। তাই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রয়োজনানুযায়ী ব্যায়াম ও খেলাধুলা করা তাদের শরীর-মন সবকিছুর জন্যই দরকার।
⬗ বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধের জাগরণ :
বর্তমানে ক্রীড়া জগৎ ভৌগোলিক বেড়াজাল, জাতিগত ও ধর্মগত ভেদাভেদকে অতিক্রম করে বিশ্বাঙ্গনকে গৃহাঙ্গনে রূপান্তরিত করেছে। কখনও অলিম্পিক ক্রীড়ামোদী মানুষের মিলনক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে, আবার কখনও ‘এশিয়াড’ বিভিন্ন দেশের মধ্যের ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে। খেলাধুলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দেশের মানুষ যখন পরস্পরের সম্মুখীন হয় তখন প্রতিযোগিতার ঊর্ধ্বে স্থাপিত হয় বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ।
⬗ খেলাধুলো ও জাতীয় সংহতি:
খেলাধুলো মানুষের মনে জাতীয়তাবোধ জাগিয়ে তোলে। এই জাতীয় চেতনা প্রত্যেক দেশেরই মূল্যবান সম্পদ। এক দেশের সঙ্গে অন্যদেশ যখন প্রতিযোগিতামূলক ক্রীড়ায় অংশগ্রহণ করে, তখন খেলোয়াড়রা স্বদেশের প্রতিনিধি হিসেবে খেলেন। তাদের মধ্য দিয়ে দেশবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা, আদর্শবোধ, স্বপ্ন রূপায়িত হয়। তখন তাঁরা সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশগ্রহণ করে দেশের সম্মান বাড়ানোর জন্য সচেষ্ট হন। জাতি, ধর্ম, বর্ণ সবকিছুর ঊর্ধ্বে তখন গোটা দেশ হয়ে ওঠে ‘একজাতি, একপ্রাণ’।
⬗ খেলাধুলো ও শিক্ষা :
শিক্ষা খেলাধুলোর মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। শিশু যেমন খেলার মধ্য দিয়ে শিক্ষালাভ করে, তেমনি আবার খেলাধুলো শিক্ষার অন্যতম অঙ্গ। শিক্ষার লক্ষ্য যদি হয় শিক্ষার্থীর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ, তবে খেলাধুলো হল তার অন্যতম সহায়ক। খেলাধুলোর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীর শরীর সুগঠিত হয়, মন প্রফুল্ল ও উদার হয়। দেহ ও মনের গ্লানি দূরীভূত হয়ে উদ্দীপনা ও অফুরন্ত উৎসাহের সঞ্চার হয়।
আরও দেখুনঃ বিশ্ব উষ্ণায়ন : বাংলা প্রবন্ধ রচনা | Global Worming: Bangla Probondho Rochona
⬗ উপসংহার :
মানুষের জীবনে খেলাধুলোর অপরিহার্যতার কথা এখন সকলেই স্বীকার করেন। দেশের সর্বাঙ্গীণ উন্নতির ক্ষেত্রে খেলাধুলোর প্রভূত অবদান রয়েছে। সমস্ত রকম বিভেদের ঊর্ধ্বে খেলাধুলো মানুষে-মানুষে সম্প্রীতি গড়ে তোলে। কিন্তু অনেক সময় খেলাধুলোর জগতে সংকীর্ণ দলীয় রাজনীতি প্রবেশ করে তাকে কলুষিত করে তোলে। তাই এই সংকীর্ণ রাজনৈতিক আবিলতা যাতে খেলোয়াড়দের মনোবলে আঘাত না করে সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। খেলার অঙ্গনে নতুন নতুন প্রতিভা যাতে সুযোগ পায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। তবেই দেশের উন্নতি ও মানুষের ভবিষ্যৎ উন্নতি সম্ভবপর হবে।
আমাদের পোষ্টের লেটেস্ট আপডেট পেতে আমাদের Whatsapp Channel জয়েন করুন এবং Telegram Channel জয়েন করুন।