Last Updated on July 4, 2024 by Shiksha Diksha
ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার ভালোমন্দঃ প্রবন্ধ রচনা (Internet and Social Media)
আমাদের এই পেজে ” ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার (Internet and Social Media) ভালোমন্দ ” বাংলা প্রবন্ধ রচনা দেওয়া হলো। বিভিন্ন পাবলিশারের বওই থেকে এই বাংলা প্রবন্ধ রচনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সমস্ত ক্লাসের ক্ষেত্রেই এই রচনা প্রযোজ্য।
⬕ রচনা সূত্র: ভূমিকা – ইন্টারনেট কি – সোশ্যাল মিডিয়ার পরিচয় – যোগাযোগ স্থাপন- শিক্ষাব্যবস্থায় ভূমিকা – রোজগারের নতুন ঠিকানা – বিনোদনের মাধ্যম – আর্থিক লেনদেনে ভূমিকা – সময়ানুসারী হওয়া- প্রযুক্তিদ্বয়ের কুফল – উপসংহার।
এক নজরেঃ
⬕ ভূমিকা :
ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়া (Internet and Social Media) – এই দুইয়ের নাম শোনেননি এরকম মানুষের সংখ্যা বোধহয় বড়োই কম। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে ইন্টারনেট ব্যক্তিজীবনের প্রত্যহিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ইন্টারনেটের ক্রমনোন্নয়ন আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্য ও উন্নয়নের বার্তা বহন করে আনে। বর্তমানে তাই বিভিন্ন প্রয়োজনে ইন্টারনেটের ব্যবহার লক্ষিত হয়। অপরপক্ষে ইন্টারনেটের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত শব্দ হলো সোশ্যাল মিডিয়া। তথ্যপ্রযুক্তির নতুনতম সংযোজনটি দূর কে করেছে নিকট, পরকে করেছে আপন, অধরাকে এনে দিয়েছে চেনা দায়রায়, আবার দিয়েছে উপার্জনের নতুন পথও। তাই বর্তমান প্রজন্মের কাছে এই দুটি শব্দ যেন জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত হয়ে গেছে।
⬕ ইন্টারনেট কী:
‘Inter connected’ ও ‘Networks’ এই দুটি শব্দের একত্রিত সংক্ষিপ্তকার হল ‘ Internet’ । পরস্পর সংযুক্ত অনেকগুলি ডিভাইস (যেমন- কম্পিউটার, মোবাইল, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ ইত্যাদি) এর নেটওয়ার্ক বা কার্যক্রমের সমন্বয় হল ইন্টারনেট। বিশেষ বিবিধ গেটওয়ে বা রাউটারের মাধ্যমে বিভিন্ন ডিভাইজের নেটওয়ার্কগুলি একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। বর্তমানে ওয়ারলেস বা বে তার নেটওয়ার্ক দাঁড়াও ডিভাইজগুলি সংযুক্ত থাকে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ডিভাইজগুলি আন্তর্জাতিক স্তরে তথ্য আদান-প্রদান করে এবং যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে।
⬕ সোশ্যাল মিডিয়ার পরিচয়:
এই ইংরেজি শব্দটির বাংলা হল সামাজিক মাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। তথ্যপ্রযুক্তির এই শাখাটির বিস্তারে সহায়ক ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের সাহায্যে যে সকল মাধ্যমকে ব্যবহার করে ভার্চুয়াল কমিউনিটি বা কৃত্রিম সমাজ গড়ে তোলা যায় তাকে সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক মাধ্যম অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বলা চলে। এই কৃত্রিম জগতে বিভিন্ন কন্টেন্ট পোস্ট করে, নিজের কমেন্টস শেয়ার করে ব্যাক্তিরা নিজেদের ভাবনাচিন্তা, ধ্যানধারণা শেয়ার করে। Facebook, Twitter, whatsapp, instagram ইত্যাদি হলো উল্লেখযোগ্য সোশ্যাল মিডিয়া। দেশবিদেশের সঙ্গে মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সংযুক্ত হয়।
⬕ যোগাযোগ স্থাপন:
সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটের সহায়তায় বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক বেশি সহজতর হয়ে উঠেছে। বর্তমানে আমাদের থেকে বহু দূরে অবস্থিত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব। পূর্বে যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হলেও তা বেশ কষ্টসাধ্য ও সময় সাপেক্ষ ছিল কিন্তু এখন মুহূর্তেই পৃথিবীর দুই প্রান্তে অবস্থানকারী ব্যক্তির মধ্যে কথোপকথন তথা সাক্ষাৎ দর্শন সম্ভব।
⬕ শিক্ষা ব্যবস্থায় ভূমিকা:
বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থা সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটের (Internet and Social Media) ওপর ব্যাপক রূপে নির্ভরশীল। ইন্টারনেটে অসংখ্য বই, রেফারেন্স বই, অনুশীলন, অনলাইন হেল্প সেন্টার, বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের অভিমত পাওয়া যায় যা শিক্ষার্থীকে একটি বিষয় সম্বন্ধে বিশদে জানতে সাহায্য করে। বিভিন্ন ওয়েবসাইট আমাদের অবারিত প্রবেশাধিকার প্রদান করায় আমরা ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোন সময় যে কোন প্রশ্ন ইন্টারনেটের সামনে তুলে ধরতে পারি। ব্যাক্তি নির্ভরতার পরিবর্তে স্বতন্ত্রভাবে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোনিবেশ ঘটাতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা ইউটিউব ফেসবুকে এডুকেশন চ্যানেল খুলে বিভিন্ন বিষয় ধরে ধরে পড়ানোর কাজে ব্যাপৃত হচ্ছেন,এতে অসংখ্য শিক্ষার্থী উপকৃত হচ্ছে। আবার, মহামারি পরিস্থিতিতে তো গোটা শিক্ষা ব্যবস্থায় হয়ে ওঠে অনলাইন মাধ্যমে নির্ভরশীল।গুগল মিট, হোয়াটস অ্যাপ ইত্যাদি মাধ্যমে গ্রুপ খুলে স্কুল কলেজের পড়াশোনা থেকে শুরু করে পরীক্ষা গ্রহণ পর্যন্ত চলছে। মহামারি পরিস্থিতিতে শিক্ষার সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেট সম্পূর্ণভাবে জড়িয়ে পড়ে।
⬕ রোজগারের নতুন ঠিকানা:
অনলাইন সেলিং (Online Selling), অনলাইন ব্যবসা (Online Business), অনলাইন কোচিং (Online Coching)- এগুলো এখন সকলের জানা সত্য। নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী, সবজি মাছ মাংস থেকে শুরু করে মূল্যবান অলংকার সামগ্রী- কি না বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে? মহামারীতে যেমন অসংখ্য মানুষ কাজ হারিয়েছেন তেমনি সেই সুযোগেই তৈরি হয়েছে অসংখ্য ফেসবুক পেজ (Facebook page), ইউটিউব চ্যানেল (Youtube Channel) বা ইনস্টাগ্রাম (instagram) একাউন্ট। অনলাইন সেলার, ই-কমার্সিয়াল সাইটদের তো এখন ব্যাপক রমরমা। কমদামে বাড়িতে বসে ভালো জিনিস পেয়ে যাচ্ছে মানুষ। এ ছাড়া কেউ রান্নার ভিডিও বানিয়ে রোজগার করছেন, আবার কেউ অন্যকে রোস্ট করে মানুষকে হাসির খোরাক জোগাচ্ছে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এর যুগে রোজগারের সুযোগ অনন্ত-শুধু অপেক্ষা একটু ভাইরাল হওয়ার।
আরও দেখুনঃ বিশ্ব উষ্ণায়ন : বাংলা প্রবন্ধ রচনা | Global Worming: Bangla Probondho Rochona
⬕ বিনোদনের মাধ্যম:
সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি বর্তমান প্রজন্ম অনেক বেশি আকৃষ্ট। অনলাইন গেমিং হোক, মজার ভিডিও দেখা হোক কিংবা অনলাইন সিরিয়াল- সিনেমা দেখা হোক বা গান শোনা হোক সর্বত্রই বর্তমানের বিনোদনের অন্যতম অঙ্গ। অবসর বিনোদনের জন্য এখন আর বাড়ির বাইরে বেরিয়ে সিনেমা হল বা নাট্যশালায় যেতে হয় না, কষ্ট করে বিছানা ছেড়ে উঠে খুলতে হয় না টিভিও। একটা মোবাইল আর তাতে সচল ডেটা কানেকশন থাকলেই যথেষ্ট। সোশ্যাল নেটওয়ার্কের কল্যাণে এখন তো অনেক নতুন সিনেমায় রিলিজ হচ্ছে OTT প্ল্যাটফর্মে ; মূল সম্প্রচার সময়ের আগেই অনলাইনে দেখা যাচ্ছে পছন্দের সিরিয়ালগুলি।
⬕ আর্থিক লেনদেনে ভূমিকা:
বর্তমানের প্রযুক্তি নির্ভরতার যুগে অর্থনৈতিক লেনদেনও ইন্টারনেট নির্ভর হয়ে উঠেছে। এখন আর সময়ের অপব্যবহার করে আমাদের দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। বরং ইন্টারনেট ও ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমে অল্প সময়ে অর্থ দেওয়া নেওয়া সম্ভব। ছোট বড় প্রায় সব দোকানেই ফোন পে (Phone Pay), গুগল পে (Google Pay), পে -টিএম (Paytm) করার জন্য QR Code টা দেওয়া থাকে।
⬕ সময়ানুসারী হওয়া:
সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বে কোথায়, কখন কি সংঘটিত হচ্ছে সে সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল থাকতে পারি। কোনো ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই তার আপডেট পৌঁছে যাওয়ায় ব্যাক্তি বিশেষও সে সম্পর্কে জ্ঞাত হতে পারে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম বর্তমানে যেমন নিজস্ব ওয়েবসাইট খুলেছে তেমনি খুলেছে সকল সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে নিজস্ব পেজও। এর ফলে প্রতিমুহূর্তে প্রতিটি খবর জনসমক্ষে প্রকাশিত হওয়ার সুযোগ লাভ করে।
⬕ প্রযুক্তিদ্বয়ের কুফল:
কোনো কিছুই নিরঙ্কুশ সুফলের বার্তাবাহী হতে পারে না। ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়াও (Internet and Social Media) এর থেকে আলাদা কিছু নয়, এরা দূরকে কাছে এনেছে, কিন্তু কাছকে করে দিয়েছে দূরে। মানুষ তার ভার্চুয়াল জগতে এতটাই ব্যস্ত যে নিজেদের পরিবারের সঙ্গে সময় অতিবাহিত করা বা একটু কথা বলারও সময় নেই। পরিজনদের বাড়িতে যাওয়া তো এখন নয় মাস ছয় মাসের ঘটনাও নয়। শিক্ষাব্যবস্থা অনলাইন ভিত্তিক হওয়ায় শহুরে শিক্ষার্থীরা লাভবান হলেও প্রত্যন্ত গ্রামগুলি এই সুবিধা থেকে বঞ্চিতই হচ্ছে। তাই শিক্ষার অভাবে বাড়ছে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা, বাড়ছে দুষ্কৃতিককর্মের হার। তাছাড়া মোবাইল বা কম্পিউটার মুখী শিশুরা অনেক বেশি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। সমন্বয় শ্রেণিস্বার্থের কথা ভাবা তারা ভূলে যাচ্ছে, নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তাদের সামাজিক জীবন ও মানসিকতা। তাছাড়া এভাবে আদৌ প্রকৃত শিক্ষা হয় না। অনলাইন পরীক্ষাতেও দেখে লেখার সুযোগ থাকায় পড়াশোনা করার প্রতি অনীহা শিশু থেকে কিশোর সকলের মধ্যেই প্রকট।আবার, অনলাইন ব্যাবসার রমরমা ছোটো বড়ো সব দোকানগুলির ব্যবসাতেই বাধ সাধছে। বড়ো দোকানগুলি অনলাইন ব্যবসায় গা ভাসালেও ছোটো দোকানিরা তা পারছেন না। ফলে তাদের কাছে রোজগার বেশ কঠিন বিষয় হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে আবার আর্থিক লেনদেনে ভারত ‘ ডিজিটাল ইন্ডিয়া ‘ হয়ে উঠলেও ডিজিটাল চুরিতেও ভারত বেশ পাকাপোক্ত হয়ে উঠেছে। নানারকম নতুন নতুন উপায় অনলাইন ব্যাংক একাউন্ট ফাঁকা করে দেওয়াটাও যেন একটা নতুন প্রফেশন হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ, এই প্রযুক্তিদয় মোটেই নিরঙ্কুশ ভালোর আকর নয়।
⬕ উপসংহার:
নিঃসন্দেহে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেটের ব্যবহার একেবারেই নিরঙ্কুশ নয়। সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি এদের ব্যবহার করে কুচক্রীদের কার্যসিদ্ধি, নারী অবমাননা ইত্যাদি ক্রিয়াশীল থাকছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এদের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। বর্তমানে আমরা এমন একটা পরিস্থিতিতে পৌঁছেছি যে, সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেট (Internet and Social Media) ছাড়া আধুনিক জীবনের রথচক্র সচল রাখাই সম্ভব নয়।
আমাদের পোষ্টের লেটেস্ট আপডেট পেতে আমাদের Whatsapp Channel জয়েন করুন এবং Telegram Channel জয়েন করুন।
Latest Posts:
- মাধ্যমিক ইংরেজি প্রশ্ম ২০২৫ | Madhyamik English Question 2025 pdf Download
- মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ম ২০২৫ | Madhyamik Bengali Question 2025 pdf Download
- বাংলা প্রবন্ধ রচনা | Bangla Probondho Rochona
- WBBSE Holiday List 2025 | মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের ছুটির তালিকা
- একটি নদীর আত্মকথা- বাংলা প্রবন্ধ রচনা | Akti Nadir Atmakatha Bangla Probondho Rochona