Last Updated on March 11, 2025 by Shiksha Diksha
বিজ্ঞান: আশীর্বাদ না অভিশাপ (Bigyan Ashirbad na Abhishap )
আমাদের এই পেজে ” বিজ্ঞান: আশীর্বাদ না অভিশাপ (Bigyan Ashirbad na Abhishap)” বাংলা প্রবন্ধ রচনা দেওয়া হলো। বিভিন্ন পাবলিশারের বই থেকে এই বাংলা প্রবন্ধ রচনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সমস্ত ক্লাসের ক্ষেত্রেই এই রচনা প্রযোজ্য।
রচনা সূত্র: ভূমিকা- বিজ্ঞানের আবিষ্কার ও মানব সমাজ- মানব জীবনে বিজ্ঞানের প্রভাব- অতিরিক্ত বিজ্ঞান নির্ভরতা- বিজ্ঞানের অভিশপ্ত দিক- বিজ্ঞানের অভিশাপ মুক্তি- বিজ্ঞানের কল্যাণ কামনায় মানুষের ভূমিকা- উপসংহার।
এক নজরেঃ
ভূমিকা:
আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞানের অগ্রগতি মানব সভ্যতার অগ্রগতি তথা মানুষের মঙ্গল সাধনেরই নামান্তর। মানুষের হিত সাধনের জন্যই বিজ্ঞানের সৃষ্টি। কিন্তু ভাবনার বিষয়, বিশ শতকের বিজ্ঞানকে অকল্যাণকর দিকে নিক্ষেপ করা হয়েছে। ফলে বিজ্ঞানের আশীর্বাদী মূর্তি আজ সংহারিণী মূর্তিতে পর্যবসিত হতে চলেছে।
বিজ্ঞানের আবিষ্কার ও মানবসমাজ:
আদিম মানুষ যেদিন প্রথম আগুন জ্বালাতে শেখে সেদিন থেকে বিজ্ঞানের জয়যাত্রার সূচনা। তারপর সে ধীরে ধীরে ধাতু আবিষ্কার করল, শিখলো চাকার ব্যবহার। বিজ্ঞানের কল্যাণেই আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে বৈদ্যুতিক শক্তি, বাষ্প শক্তি, যন্ত্রশক্তির; আবিষ্কার হয়েছে নানা যন্ত্র। বেতার যন্ত্র ও দূরদর্শন দূরকে করে দিলো আরো নিকট। বিজ্ঞানের সাহায্যেই দূরারোগ্য ব্যাধির কবল থেকেও মানুষ বাঁচতে পারছে। তারা ছুটে চলেছে বিভিন্ন গ্রহে ও উপগ্রহে। মুদ্রণ যন্ত্র, বেতার, দূরদর্শন সবই বিজ্ঞানের আশীর্বাদস্বরূপ।
মানবজীবনে বিজ্ঞানের প্রভাব:
মানুষের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত বিজ্ঞান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তার টুথপেস্ট, ব্রাশ, ফ্যান, হিটার, গ্যাস, কুকার, ফ্রিজ, রেডিও, ঘড়ি, টেলিভিশন এসব কিছুই বিজ্ঞানের দান। কৃষি, শিল্প সব ক্ষেত্রেই এই বিজ্ঞানের প্রয়োগ ও প্রসার লক্ষ্য করা যায়। ট্রাক্টর, পাম্প প্রভৃতি থেকে শুরু করে উন্নত বীজ, স্যার- সবই বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফল। যাতায়াতের সুবিধার জন্য এসেছে বাস, ট্যাক্সি, ট্রেন ইত্যাদি। মুদ্রণ যন্ত্র তাকে সমৃদ্ধ ও সুরক্ষিত করেছে। দূরাভাষ দূরকে করেছে নিকট। বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে আবিষ্কৃত প্রতিষেধক এর মাধ্যমে মানুষ প্রতিরোধ করে চলেছে কঠিন ব্যাধিকে।
আরও দেখুনঃ বিশ্ব উষ্ণায়ন : বাংলা প্রবন্ধ রচনা | Global Worming: Bangla Probondho Rochona
অতিরিক্ত বিজ্ঞান নির্ভরতা:
বর্তমান যন্ত্র সভ্যতার যুগে দিন দিন মানুষ পরিণত হচ্ছে যন্ত্রে। মানুষ তার ছোটো থেকে ছোটো কাজের জন্য নির্ভরশীল বিজ্ঞানের প্রতি। যন্ত্র নির্ভর মানুষ ধীরে ধীরে তার নিজস্ব শ্রমে অপারক হয়ে পড়ছে। বস্তুত মানুষ যন্ত্রকে না, যন্ত্র যেন মানুষকে চালনা করছে। আবার মানুষ অতিরিক্ত বিজ্ঞান নির্ভর হয়ে পড়ায় তাদের জীবনের বৃত্তিগুলিকে ভুলতে বসেছে। এই অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা মানুষকে বিজ্ঞানের দাসে পরিণত করেছে।
বিজ্ঞানের অভিশপ্ত দিক:
বিজ্ঞান সভ্যতার এক কলঙ্কময় অধ্যায় হল হিরোশিমা ও নাগাসাকির হত্যাকাণ্ড। উন্নত দেশগুলি পারমাণবিক শক্তিতে বলীয়ান হয়ে আজ ক্ষুদ্র দেশ গুলির ওপর নির্বিচার শোষণ চালাচ্ছে। ডিনামাইট আজ পাহাড় ভাঙার কাজে ব্যবহৃত না হয়ে মানুষ মারার কাজে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। নিত্যনৈমিত্তিক সন্ত্রাসবাদের শিকার হচ্ছে মানুষ। যানবাহনের ধোঁয়া, বজ্র পদার্থ আজ প্রকৃতির ভারসাম্য বিনষ্ট করেছে। যন্ত্র সভ্যতার যুগে মানুষ যেন নিষ্প্রাণ যন্ত্রে পরিণত হচ্ছে। কৃত্রিম জীবনযাপন, মানবিকতার অবনমন আধুনিক বিজ্ঞাননির্ভর সভ্যতার চরম অভিশাপ।
বিজ্ঞানের অভিশাপ মুক্তি:
বিজ্ঞানকে অভিশপ্ত করার জন্য দায়ী মানুষ। স্বার্থাম্বেষী, জ্ঞানপাপী মানুষের অন্তরে শুভবোধ জাগ্রত না হলে বিজ্ঞান বিপথে চালিত হবেই। এর জন্য প্রয়োজন মানুষের শুভবোধ জাগরণ। মানুষের কল্যাণে বিজ্ঞানকে নিয়োগ করতে হবে এবং বিজ্ঞান পরিচালককেও শুভবোধ দ্বারা পরিচালিত হতে হবে। তবেই বিজ্ঞান হবে মানুষের কাছে আশীর্বাদস্বরূপ।
বিজ্ঞানের কল্যাণ কামনায় মানুষের ভূমিকা:
মানুষের কল্যাণ কামনায় যেমন বিজ্ঞান নিয়োজিত তেমনি মানুষকেও বিজ্ঞান এর কল্যাণের কথা ভাবতে হবে। পারস্পরিক কল্যাণ ভাবনার মধ্য দিয়েই বিজ্ঞান প্রকৃত কল্যাণকর ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে। বিজ্ঞান প্রতিটি পদক্ষেপে যেভাবে মানুষের সুখ স্বাচ্ছন্দ ও নিশ্চয়তা প্রদানে এবং তার কল্যাণবিধানে লিপ্ত তা যেন কোনোভাবে নষ্ট না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। জনগণ ও সরকারকে সচেতন হতে হবে যাতে ধ্বংসাত্মক কাজে যেন কোনভাবেই বিজ্ঞানের প্রয়োগ না ঘটানো হয়। এই উদ্দেশ্যে আইনের কঠোরতা বৃদ্ধি করতে হবে। সন্ত্রাসবাদ দমনমূলক কাজে সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই বিজ্ঞান কল্যানকামী শক্তিরূপে সকলের কাছে ধরা দেবে।
উপসংহার:
সমাজের বিবেকহীন মানুষের স্বার্থসর্বস্ব মানসিকতার কাছে ‘বিজ্ঞান তো সংকলিত জিনিসের ভিড় শুধু’। তাই সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতা ভুলে মানুষ যদি বিশ্বমানবতাবোধে উদ্বুদ্ধ হয় তাহলে বিজ্ঞানকে আশীর্বাদ রূপে লাভ করা সম্ভব। বর্তমানে বিজ্ঞানের যে রুপটি ধ্বংসের দিকে মুখ করে আছে, সকলের দায়িত্ব তাকে কল্যাণময় রূপ প্রদান করা। বিজ্ঞানকে বিশ্বস্ত ভৃত্যে পরিণত করতে পারলে তবে তা আর অভিশাপ থাকবে না, আশীর্বাদ হয়ে উঠবে নিরবিচ্ছিন্ন।
- জল সংকটের প্রতিকারে আমাদের কর্তব্য-বাংলা প্রবন্ধ রচনা | Jal Sankater Pratikare Amader Kartabya
- মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার প্রয়োজনীয়তা-বাংলা প্রবন্ধ রচনা | Matri Bhasai Bigyancharcher Proyojoniota
- বাংলা প্রবন্ধ রচনা | Bangla Probondho Rochona
- একটি নদীর আত্মকথা- বাংলা প্রবন্ধ রচনা | Akti Nadir Atmakatha Bangla Probondho Rochona
- শৈশবের ফেরিওয়ালা নারায়ন দেবনাথ-বাংলা প্রবন্ধ | Narayan Debnath
আমাদের পোষ্টের লেটেস্ট আপডেট পেতে আমাদের Whatsapp Channel জয়েন করুন এবং Telegram Channel জয়েন করুন।
Latest Posts:
- মাধ্যমিক বঙ্গানুবাদ | দশম শ্রেণীর বাংলা বঙ্গানুবাদ | Bangla Bonganubad Class 10
- 15+ Bengali Report Writting | বাংলা প্রতিবেদন রচনা
- জল সংকটের প্রতিকারে আমাদের কর্তব্য-বাংলা প্রবন্ধ রচনা | Jal Sankater Pratikare Amader Kartabya
- মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার প্রয়োজনীয়তা-বাংলা প্রবন্ধ রচনা | Matri Bhasai Bigyancharcher Proyojoniota
- দশম শ্রেণীর ইতিহাস সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর | Madhyamik History All Chapter Question Answer