Narayan Debnath Bangla Probondho

শৈশবের ফেরিওয়ালা নারায়ন দেবনাথ-বাংলা প্রবন্ধ | Narayan Debnath

Blinking Buttons WhatsApp Telegram

Last Updated on July 5, 2024 by Shiksha Diksha

শৈশবের ফেরিওয়ালা নারায়ন দেবনাথ-বাংলা প্রবন্ধ (Narayan Debnath)

ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বাংলা প্রবন্ধ রচনা (Bangla Probondho Rochona) ” শৈশবের ফেরিওয়ালা নারায়ন দেবনাথ-বাংলা প্রবন্ধ (Narayan Debnath) ” নিয়ে আলোচনা করা হলো।


প্রবন্ধ সূত্র: ভূমিকা-প্রাথমিক জীবন-কর্মজীবন সৃষ্টির আলোকে মারায়ণ দেবনাথ-অশ্বচিত্রণে নারায়ণ দেবনাথ-পুরস্কার ও সম্মাননা- উপসংহার

অনুসরণে লেখা যায়ঃ (১) বাংলা কমিক্স ও নারায়ণ দেবনাথ, (২) নারায়ণ দেবনাথ স্মরণে (Narayan Debnath) , (৩) চলে গেলেন নারায়ণ দেবনাথ।

▶ ভূমিকা:

তারিখটা ২০২২-এর ১৮ জানুয়ারি, সময় সকাল ১০.১৫, ইতিহাস হয়ে যায় বাংলার কমিক জগতের এক অদ্বিতীয় নাম নারায়ণ দেবনাথ (Narayan Debnath) । দীর্ঘ ২৫ দিন ধরে রোগাক্রান্ত থাকার পর ৯৭ বছর বয়স্ক বর্ষীয়ান এই সাহিত্যিক শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে গোটা বাংলা। যাঁর সৃষ্টি আট থেকে আশি সকলের মন নাড়া দিয়ে যায় তাঁর চিরবিদায় যে সকলকেই কাঁদিয়ে যাবে তেমনটাই তো স্বাভাবিক। তবে মৃত্যু তো হয়েছে স্রষ্ঠার, তাঁর সৃষ্টি রয়ে যাবে চির অমলিন রূপে বাঙালির ঘরে ঘরে, মনের মাঝারে ১৯৬০-এর দশক থেকে বাঙালি সংস্কৃতির এক প্রত্যঙ্গ হলেন নারায়ণ দেবনাথ।

▶ নারায়ণ দেবনাথের (Narayan Debnath) প্রাথমিক জীবন:

সাহিত্যিক নারায়ণ দেবনাথ (Narayan Debnath) ১৯২০-এর ২৫ নভেম্বর হাওড়ার শিবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। শিবপুর রোডে শিবপুর গার্লস স্কুলের কাছে একটা দোতলা বাড়িতে তিনি থাকতেন। তবে তাঁদের আদিনিবাস বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরে। পারিবারিক সূত্রে তাঁর বাবা-কাকাদের গয়নার ব্যাবসা ছিল। সেই সুযোগে শিল্পের প্রতি তাঁর ঝোঁক যেমন তৈরি হয়েছিল তেমনি অলংকার প্রভৃতির নকশা তৈরির সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁর কাকা গয়নায় নকশার কাজের পাশাপাশি রিলিফের কাজও করতেন তাই কাকার কাজ দেখেই নারায়ণ দেবনাথ আঁকার কাজ শুরু করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমকালে পাড়ার এক বন্ধুর উৎসাহে ও জোরাজুরিতে একটি বেসরকারি আর্ট কলেজে নারায়ণ দেবনাথ ভরতি হন যা পরবর্তীকালে ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। সেখানে তিনি কমার্শিয়াল আর্ট নিয়ে পড়াশোনা করেন। তবে পাঁচ বছর পড়াশোনার পরেও চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষা না দেওয়ায় আর্ট কলেজের ডিগ্রি তাঁর ছিল না।

আরও দেখুন:  মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার প্রয়োজনীয়তা-বাংলা প্রবন্ধ রচনা | Matri Bhasai Bigyancharcher Proyojoniota

▶ নারায়ণ দেবনাথের (Narayan Debnath) কর্মজীবন:

নারায়ণ দেবনাথের কর্মজীবনের সূচনা বিজ্ঞাপন সংস্থায় কাজ করার মধ্য দিয়ে। বাংলা কমিক্সের জগতে তাঁর প্রবেশ দেব সাহিত্য কুটিরের সম্পাদক মন্ডলীর উৎসাহে। ১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে তিনি আনন্দমেলায় কাজ শুরু করেন। ১৯৬১-তে আনন্দমেলায় রবীন্দ্রনাথের শতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘রবি ছবি’ নামক একটি ধারাবাহিক কমিক্সও তিনি তৈরি করেন। তাঁর প্রথম কমিক্স চরিত্র ‘হাঁদা ভোঁদা’-র আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে, ১৯৬৫-তে শুকতারায় আত্মপ্রকাশ করে ‘বাঁটুল দি গ্রেট’। এরপর আসে ‘নন্টে ফন্টে’। ১৯৬৯-এ ‘কিশোর ভারতী’ পত্রিকায় তাদের আত্মপ্রকাশ। পরে দীনেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যখন ‘কিশোর ভারতী’-র সম্পাদক হন তখন তাঁর প্রস্তাবক্রমে নারায়ণ দেবনাথ সৃষ্টি করেন ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড ইন্দ্রজিৎ’ চরিত্রটি। তবে ‘নন্টে ফন্টে’ কিশোর ভারতীতে প্রকাশিত তাঁর প্রথম ধারাবাহিক কমিক স্ট্রিপ নয়। তাঁর কিশোর ভারতীতে প্রকাশিত প্রথম ধারাবাহিক কমিক স্ট্রিপ হল ‘পটলচাঁদ দ্য ম্যাজিশিয়ান’, যার তিনটি সংখ্যা বেরোয়। এ ছাড়াও নারায়ণ দেবনাথ সৃষ্টি করেছেন ‘বাহাদুর বেড়াল’, ‘ডানপিটে খাঁদু আর তাঁর কেমিক্যাল দাদু’, ‘পেটুক মাস্টার বটুকলাল’, ‘শুটকি আর মুটকি’-র মতো চরিত্র।

তবে কমিক্স তৈরির কাজ শুরুর আগে তিনি বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রীর লোগো, মাস্টহেড ও সিনেমা কোম্পানির বিভিন্ন লিফলেট বানানোর কাজ করতেন। এরপর ‘শুকতারা’-র একজন হওয়ার পর তাঁকে আর পিছনে ফিরে দেখতে হয়নি।

আরও দেখুনঃ রাজা রামমোহন রায়ঃ বাংলা প্রবন্ধ রচনা | Raja Ram Mohan Roy Bangla Probondho Rochona

▶ সৃষ্টির আলোকে নারায়ণ দেবনাথ (Narayan Debnath) :

নারায়ণ দেবনাথ সৃষ্ট কমিক্সের চরিত্রগুলি হল-বাঁটুল, হাঁদা ভোঁদা, নন্টে-ফন্টে, বাহাদুর বেড়াল, ব্ল‍্যাক ডায়মন্ড ইন্দ্রজিৎ রায়, ম্যাজিশিয়ান পটলচাঁদ, খাঁদু ও তার কেমিক্যাল দাদু, কৌশিক রায়, শুঁটকি আর মুটকি, পেটুক মাস্টার বটুকলাল। প্রতিটি চরিত্রই ছিল আপন আপন বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল।

বাঁটুল হল বাঙালির প্রথম সুপার হিরো। পরণে গোলাপি স্যান্ডো গেঞ্জি ও কালো রঙের হাফ প্যান্ট, খালি পা, চল্লিশ ইঞ্চি ছাতি ও সরু পা-ওয়ালা বাঁটুল ভারত-পাক্‌ যুদ্ধের পটভূমিতে দাঁড়িয়ে খান সেনাদের ‘প্যাটন পেটা’ করে বাঙালির জাতীয়তাবাদী ভাবনাকে যেন উশকে দেয়। বাঁটুলের সঙ্গে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তার দুই ভাগনে ভজা ও গজাও। ষোলো আনা বাঙালি পরিমণ্ডলে ঘেরা হাঁদা ভোঁদার কীর্তিকলাপও ছোটো-বড়ো সবাইকে আকৃষ্ট করে। রোগা হাঁদার চালাকি নিয়ে নাজেহাল হওয়া ও সহজ সরল মোটাসোটা ভোঁদার জয়ের কাহিনি বারবার পুনরাবৃত হলেও কখনও একঘেয়েমি আনেনি। নন্টে-ফন্টের জগৎ আবার সম্পূর্ণ আলাদা। ছাত্রাবাসের ঘেরাটোপের জগতে পাতিরাম হাতি ও কেল্টুর সঙ্গে নন্টে-ফন্টের অনিঃশেষ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হস্টেল জীবনে অভ্যস্ত যে-কোনো বাঙালি সন্তানকে স্মৃতিভারাক্রান্ত করতে পারে। তাঁর তৈরি প্রতিটি চরিত্র বাঙালির মনের দোসর। তাই বাঙালির – অন্দরমহলে আজ টিনটিন, ব্যাটম্যান, সুপারম্যানরা জায়গা করে নিলেও বাটুলদের জায়গা কোনোভাবেই ম্লান হয়নি।

আরও দেখুন:  পরিবেশ সুরক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকাঃ বাংলা প্রবন্ধ | Bangla Probondho Rochona

▶ গ্রন্থচিত্রণে নারায়ণ দেবনাথ:

কমিক স্ট্রিপের রচয়িতা হিসেবে যেমন নারায়ণ দেবনাথ বিখ্যাত ছিলেন তেমনি তিনিই ছিলেন বাংলা গ্রন্থ চিত্রণের অন্যতম প্রধান মুখ। দেবসাহিত্য নিকুটিরের পূজাবার্ষিকীতে রোমাঞ্চ ও ভয়ের কাহিনির অলংকরণের দায়িত্ব সবসময় তাঁর ওপরেই ন্যস্ত হত। ১৯৫০ থেকে ‘শুকতারা’ পত্রিকার প্রচ্ছদ ও অলংকরণের কাজ নিয়মিত – করতেন। তার অলংকরণের ধরন ছিল অনেকটাই বিয়্যালিস্টিক ধাঁচের যা সহজেই পাঠককে গল্পের অন্দরে পৌঁছে দিত। বিভিন্ন স্বাদের বইয়ের প্রচ্ছদ তিনি তৈরি করেছেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা :

খ্যাতনামা এই মানুষটি একাধিক সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন। তিনিই ভারতের প্রথম ও একমাত্র কমিক্স শিল্পী যিনি ডি লিট পেয়েছেন। ২০০৭-এ তিনি পান সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, ২০১৩-তে লাভ করেন বঙ্গবিভূষণ। ২০২১ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার নারায়ণ দেবনাথকে (Narayan Debnath) ভারতের চতুর্থ শ্রেষ্ঠ বেসামরিক সম্মান পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করেছিল।

উপসংহার :

২০২১-এর ২৪ ডিসেম্বর বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার জন্য বর্ষিয়ান এই শিল্পীকে হাসপাতালে ভরতি করা হয়। এক সময় ভেন্টিলেশনে রাখা হয় তাঁকে। তাঁর চিকিৎসার জন্য মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল বোর্ডও গঠন করা হয়। তবে এক সময় চিকিৎসায় সাড়া দেওয়া বন্ধ করে দেন তিনি। দীর্ঘ ২৫ দিন বেলভিউ হাসপাতালে ভরতি থাকার পর ১৮ জানুয়ারি ২০২২-এ সকাল ১০:১৫-তে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। তাঁর চলে যাওয়া বাংলা সাহিত্যজগতে এক অপূরণীয় ক্ষতের সৃষ্টি করে। তবে যে সম্পদ তিনি রেখে গেছেন তার মধ্য দিয়েই চিরঞ্জীব হয়ে থাকবেন এই অনুপম অদ্বিতীয় শিল্পী।

আমাদের পোষ্টের লেটেস্ট আপডেট পেতে আমাদের Whatsapp Channel জয়েন করুন এবং Telegram Channel জয়েন করুন।

WhatsApp Channel Follow
Telegram Channel Join Now
Facebook Page Follow

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Telegram