Last Updated on May 30, 2024 by Shiksha Diksha
আধুনিক জীবনে প্রযুক্তির ব্যবহার
ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ” আধুনিক জীবনে প্রযুক্তির ব্যবহারঃ বাংলা প্রবন্ধ রচনা ( Bangla Prabandha rachana ) ” দেওয়া হলো। বাংলা বিষয়ের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য এই রচনা বিশেষ কাজে লাগবে।
রচনা সূত্র:
ভূমিকা- দৈনন্দিন জীবনে প্রযুক্তি- শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে প্রযুক্তি- চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রযুক্তি- তথ্যপ্রযুক্তি ও কম্পিউটার- নানা রূপে তথ্যপ্রযুক্তি- তথ্যপ্রযুক্তির ভবিষ্যৎ – উপসংহার।
আরও দেখুনঃ বিজ্ঞান: আশীর্বাদ না অভিশাপঃ বাংলা প্রবন্ধ রচন অথবা, মানব কল্যাণে বিজ্ঞানের ভূমিকাঃ বাংলা প্রবন্ধ রচনা
এক নজরেঃ
ভূমিকা:
কৌশল, দক্ষতা, পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া- এই চারের সমষ্টি হল প্রযুক্তি যা পণ্য ও সেবা উৎপাদনে অথবা বৈজ্ঞানিকভাবে কোন তথ্য বা তত্ব অনুসন্ধানে কিংবা কোনো উদ্দেশ্য সাধনে ব্যবহৃত হয়। বস্তুত বিজ্ঞানের আবিষ্কারকে মানুষের প্রয়োগিক কাজে লাগানোর উপায়কে প্রযুক্তি বলে। যেমন- জমিতে জল সেচের পাম্পও একপ্রকার প্রযুক্তি। বর্তমানে জনজীবন বিভিন্ন প্রকারের প্রযুক্তির দ্বারা চালিত। প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে অনেক বেশি সচল করে তুলেছে।
দৈনন্দিন জীবনে প্রযুক্তি:
বর্তমানের ইঁদুরদৌড়ের সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য প্রয়োজন দৈনন্দিন জীবনের দ্রুত গতি । আর এই গতি লাভ সম্ভব শুধুমাত্র প্রযুক্তির কল্যাণে। রান্নার নিত্যনতুন ইলেকট্রনিক গ্যাজেট, বাথরুমের গিজার বা অন্যান্য সামগ্রী, কাপড় কাচার ওয়াশিং মেশিন হোক বা বাসন ধোয়ার মেশিন কিংবা ঘর পরিষ্কার করার ভ্যাকিউম ক্লিনার সবই প্রযুক্তির দান। ইলেকট্রিক আলো, পাখা, এসি, ফ্রিজ, মোবাইল, টিভি সর্বত্রই প্রযুক্তির ছড়াছড়ি। এসব ছাড়া আজ আমরা এক মুহূর্তও থাকতে পারবো না।
শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে প্রযুক্তি:
প্রযুক্তিবিদ্যার একটি বিশিষ্ট ধারা হলো তথ্যপ্রযুক্তি ও কম্পিউটার। আর এই তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাব্যবস্থা ও কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত । শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারে শিক্ষা লাভের ধারাটি হয়ে উঠেছে সহজতর। বিভিন্ন শিক্ষা প্রদানকারী ওয়েবসাইট চালু হয়েছে। ইন্টারনেটের ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন অজানা তথ্য সহজেই হাতের মুঠোয় চলে আসছে। তাছাড়া করোনা আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে অনলাইন স্কুল-কলেজের পড়াশোনা চালানোর পথ। স্কুলে না গিয়েও স্কুল করতে পারা, শিক্ষাব্যবস্থাকে সচল রাখতে পারা -এও যে প্রযুক্তিরই দান। তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে বহু মানুষের কর্মসংস্থান সম্ভব হয়েছে। অফিস- আদালত, ব্যাংক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গ্রন্থাগার কোথায় নেই প্রযুক্তির ব্যবহার! বর্তমানে আইটি কোম্পানিগুলি তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর যা বহু মানুষের কর্মসংস্থানের এক ব্যাপক পথ প্রশস্ত করে দিয়েছে।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রযুক্তি:
চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির প্রয়োগ হয়ে আসছে সেই শিল্প বিপ্লবের কাল থেকে। ধীরে ধীরে মানোন্নয়ন ঘটেছে চিকিৎসা পদ্ধতির আর তাও নিত্যনতুন প্রযুক্তির সংযোজনে। চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে- (১) দ্রুত রোগ নির্ণয় ও নিরাময় সম্ভব হয়েছে। (২) ইন্টারনেটের সার্ভারে বিবিধ রোগী ও তার রোগ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে রাখা সম্ভব হয়েছে। (৩) ইলেকট্রিক হেলথ রেকর্ডে রোগীর মেডিকেল হিস্ট্রি সঞ্চিত থাকে যা থেকে ডাক্তার দ্রুত রোগের ওষুধ ও ট্রিটমেন্ট সম্পর্কে তথ্য পান। (৪) প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে চিকিৎসার ব্যয় ও পরিশ্রম কমেছে । ফলে বেড়েছে চিকিৎসার গতি। (৫) জটিল থেকে জটিল রোগ সারানো সম্ভব হচ্ছে। অঙ্গহানী হলেও মানুষ তার কৃত্রিম পরিপূরক লাভ করছে। (৬) শল্য চিকিৎসার উন্নতি ঘটেছে। রোগীর মৃত্যুর হার কমেছে।
তথ্য প্রযুক্তি ও কম্পিউটার:
বিজ্ঞান হলো তথ্য ও তত্ব সমন্বিত পরীক্ষিত বাস্তব সত্যের জ্ঞান ভান্ডার। এই জ্ঞান প্রয়োগের নাম প্রযুক্তি বিজ্ঞান। আর তথ্য নির্ভর প্রযুক্তিবিজ্ঞানের নাম হলো তথ্যপ্রযুক্তি। কর্মক্ষেত্রে একজন মানুষকে নির্ভর করতে হয়ে হয় বহু বিচিত্র তথ্যের ওপর। কিন্তু সেসব বিপুল পরিমাণ তথ্যসম্ভার ধরে রাখার জন্য মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতা সংকুলান হয় না। সেইজন্য দরকার পড়ে কম্পিউটারের। একটি বোতামে চাপ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে মুহূর্তে হাজির করে দেয় যাবতীয় তথ্যসমষ্টি। কম্পিউটারের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি মানুষের শ্রম লাঘব ও সময় সাশ্রয় করে মানবজীবনের অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে।
সমাজের সমস্ত মানুষের কাজের ক্ষেত্র সহজ করে দেয় তার ফেলে আসা দিনের অভিজ্ঞতা। মানুষের পক্ষে সকল অভিজ্ঞতা তার স্মৃতিতে অনুপুঙ্খভাবে ধরে রাখা সম্ভবই নয়। কিন্তু কম্পিউটার একাজে সক্ষম। নানা মানুষের কাজ থেকে সংগ্রহ করা এই অভিজ্ঞতা কম্পিউটার তার নিজের মধ্যে জমা করে রাখে। তাই যখনই প্রয়োজন হয় কম্পিউটারের কাছে হাত পাতলেই সে তার তথ্যভাণ্ডার উজাড় করে দেয়। একটিমাত্র বোতামের চাপে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মানুষ পেয়ে যায় তার জিজ্ঞাস্য হাজার হাজার প্রশ্নের উত্তর। বর্তমান শতকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্যের চাবি লুকিয়ে রয়েছে এই কম্পিউটারের মধ্যে। আর সেই কারণেই বিশ্বের প্রগতিবাদী সমস্ত দেশ নির্ভর করছে তথ্যপ্রযুক্তির ওপর।
নানারূপে তথ্য প্রযুক্তি:
তথ্যপ্রযুক্তির জগতে রয়েছে এমন বহু বিচিত্র শিক্ষণীয় বিষয় যাকে অবলম্বন করে মানুষ খুঁজে পেতে পারে নানা কাজের সন্ধান। যেমন সেলস এক্সিকিউটিভ, হার্ডওয়ার ইঞ্জিনিয়ার, হার্ডওয়ার ডিজাইনার, সফটওয়্যার এক্সপার্ট, কম্পিউটার প্রোগ্রামার, কম্পিউটার অপারেটর, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, ইনপুট- আউটপুট কন্ট্রোল পার্সন ইত্যাদি। এসবের যেকোনো একটিতে দক্ষতা অর্জন করেই উপার্জনের পথ খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও মেডিকেল ট্রানস্ক্রিপশনিস্ট, মার্কেট সার্ভেয়ার, ক্যানিং, ডাটা কনভারসেশন, মার্কেট সুপারভাইজিং ইত্যাদি বাণিজ্যিক মাধ্যমেও আছে অজস্র কাজের সুযোগ। স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, টেলিপ্রিন্টার, সেলফোন, স্মার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদি আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে বিশ্ব আজ এসে হাজির হয়েছে হাতের মুঠোর মধ্যে। আর এই সবই সম্ভব হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির দ্বারা। পত্র পত্রিকা বা বই পত্রের প্রকাশনার ক্ষেত্রে ডিটিপি নিয়ে এসেছে যুগান্তরকারী বিপ্লব। সেলুলার যোগাযোগের মাধ্যমে উড়োজাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে বা হ্যারিকেন, টর্নেডো, ভূমিকম্প ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয় সম্বন্ধে আগাম জানাতে পেরে মানুষ সাবধান হতে পারছে। উপগ্রহ যোগাযোগের মাধ্যমে জিআইএস, ডিজিটাল ম্যাপিং প্রভৃতি অনেক অজানা তথ্যের সম্ভার জানা যাচ্ছে। মানুষের লাইভ লোকেশন অর্থাৎ সে কোথায় আছে তাও জানতে পারা যাচ্ছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থাও এসে গেছে হাতের মুঠোয়, নেট ব্যাঙ্কিং, এটিএম সার্ভিস মানুষের আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রটিকে সহজতর করে দিয়েছে।
তথ্যপ্রযুক্তির ভবিষ্যৎ:
বর্তমানে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীরা দলে দলে হাজির হচ্ছে শিক্ষায়তনের পাদদেশে। সরকারও এ বিষয়ে যথেষ্ট সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছে। সরকারি আনুকূল্যে গড়ে উঠেছে নানা শিল্প প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে বিদ্যালয় স্তরে কম্পিউটার শিক্ষা সূচি চালু করে সরকার সময়োপযোগী উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছে। তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে বিদেশের বুকে গড়ে উঠেছে বিশাল কর্মক্ষেত্র। সেখানে চাকুরিতে আছে আশাতীত রোজগার। তাই অনেক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী আজকাল এ বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশের মাটিতে। এদেশেও অবশ্য ধীরে ধীরে প্রযুক্তিবিদ্যা সংক্রান্ত পড়াশোনা যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছে, বেড়েছে দেশে থেকে পড়ার সুযোগও।
উপসংহার:
পরিশেষে বলা যেতে পারে সম্পদ সৃষ্টি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সংবাদ ও তথ্য আদান প্রদান, প্রকৃতির খামখেয়ালিপনার আগাম সংবাদ ইত্যাদি পরিবেশনের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক বিকাশ ও উন্নতি হল প্রযুক্তির প্রধান ফসল। প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে দেশের প্রগতির পথ প্রশস্ত হয় । একটি দেশ হয়ে ওঠে সমৃদ্ধ। দেশ সমৃদ্ধ হলে তবেই সে দেশের মানুষের জীবনে আসবে সার্বিক মুক্তি। কাজেই প্রযুক্তিকে উপেক্ষা করার উপায় নেই।
আমাদের পোষ্টের লেটেস্ট আপডেট পেতে আমাদের Whatsapp Channel জয়েন করুন এবং Telegram Channel জয়েন করুন।
- জল সংকটের প্রতিকারে আমাদের কর্তব্য-বাংলা প্রবন্ধ রচনা | Jal Sankater Pratikare Amader Kartabya
- মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার প্রয়োজনীয়তা-বাংলা প্রবন্ধ রচনা | Matri Bhasai Bigyancharcher Proyojoniota
- বাংলা প্রবন্ধ রচনা | Bangla Probondho Rochona
- একটি নদীর আত্মকথা- বাংলা প্রবন্ধ রচনা | Akti Nadir Atmakatha Bangla Probondho Rochona
- শৈশবের ফেরিওয়ালা নারায়ন দেবনাথ-বাংলা প্রবন্ধ | Narayan Debnath